এই বইটি লেখার কারণে লেখককে করতে হয়েছিলো হাজতবাস। কেন? তিনি কতগুলো প্রশ্ন করেছিলেন? উত্তর তিনি দেন নি কিছুরই সরাসরিভাবে। তবে তার প্রশ্নের ভূমিকাতেই উত্তর খুঁজে নেবার প্রয়োজনীয় তথ্য তিনি পাঠকের জন্য দিয়ে রেখেছেন। প্রশ্নগুলো তেমন অদ্ভুত কিছু নয়, এমনও নয় যে সে প্রশ্ন আর কারও মাথায় কখনও আসবে না বা আসে নি। ব্যাপারটা হচ্ছে আমরা ছোটবেলা থেকেই একটা সিস্টেমের মধ্যে বড় হয়েছি, পড়েছি কিছু বই পরীক্ষায় পাস করার জন্য। এর বাইরের বই পড়েও আমাদের বেশিরভাগ মানুষের মগজাস্ত্রের ধার খুব
একটা বাড়ে নি, আমরা তাই বিশ্বাস করে আসছি যা আমাদের শেখানো হয়েছে পরিবার আর সমাজ থেকে। সেগুলো নিয়ে আমরা প্রশ্ন তুলি না, কারণ এগুলো নিয়ে তর্ক করতে নেই। একই মানুষ যেখানে অন্য যেকোন বিষয়ে যুক্তিবাদী সেখানে ধর্মের কোন বিষয়ে তার মনে কোন যুক্তি কাজ করে না। অন্যের ধর্ম হলে ব্যাপারটা গাঁজাখুড়ি বলে উড়িয়ে দিতে মানুষের সমস্যা হয় না, ধর্মের বাইরের গল্প হলে তা হয়ে যায় রূপকথা কিন্তু একই ধরণের তথ্য নিজের ধর্মগ্রন্থে খুঁজে পেলে মানুষ সেটা নিয়ে মাথা ঘামাতে চায় না, তখন সে আগে থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে থাকে এ নিয়ে তর্ক চলবে না, করতে হবে শুধু বিশ্বাস।
আরজ আলী স্বশিক্ষিত ছিলেন বলেই বোধহয় আউট অব বক্স চিন্তা করার শক্তি তার ছিলো, যা আমাদের বেশিরভাগেরই নেই। তিনি সব ধর্মেরই বিভিন্ন অবিশ্বাস্য তথ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। উত্তর এখানে উহ্য, পাঠক নিজে উত্তর ভেবে নেবেন। অজানাকে জানতে মানুষ স্বভাবতই অনেক আগ্রহী। সেই আগ্রহ মেটাতে গিয়ে মানুষ কখনও দ্বিধায় পরে যায় আবার কখনও সন্তুষ্টি নিয়ে ফিরে আসে। এই দ্বিধা আর সন্তুষ্টি নির্ভর করে তার জানার পরিধির উপর। একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে জ্ঞানের মাপকাঠিতে একজন বিশ্বনন্দিত হতে পারে আবার ঐ একই ব্যাক্তি আরেকটি বিষয়ে জ্ঞানের মাপকাঠিতে প্রাথমিক স্তরের নিচে নেমে যেতে পারে।
একজন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাবিহীন হয়েও লেখক যে অনুসন্ধিৎসু মনের পরিচয় দিয়েছেন সেই সত্তরের দশকে, তা আজ একবিংশ শতাব্দীর বেশিরভাগ উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যেও বিরল।