ইতিহাস তো না, এ যেন এক হরর গল্প, যেখানে আমরা নিজেরাই ঢুকে বসে আছি। বইটি পড়ার পর আমাদের বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়েছে এটি ১৪ বছর আগে লেখা আর ৪২ বছরের ইতিহাস। এখন লিখলে হুমায়ুন আজাদ হয়তো এর নাম রাখতেন "অনাগত শিশুর জন্য শোকগাথা।" এ শোকগাথার শুরু আছে কিন্তু শেষ নেই। যতো দিন যাচ্ছে ততো গাঢ় হচ্ছে অন্ধকার। বইটা ভীষণ নিরপেক্ষ, নির্মোহ এক সমালোচনা গ্রন্থ। যারা বাংলাদেশ নামক অসহায় দেশের অসহায়ত্বের ক্রমইতিহাস নিরপেক্ষভাবে জানতে আগ্রহী তাদের জন্য বইটা অবশ্যই পাঠ্য।
এখন বেঁচে থাকলে হুমায়ুন
আজাদ কি এই বইটা লিখতে পারতেন? অসংকোচ প্রকাশের দুরন্ত সাহস কি এখনো থাকতো তার? খুব জানতে ইচ্ছে হয় মাঝেমধ্যে। বইটা ভয়ংকর। বাংলাদেশের রক্তাক্ত ইতিহাস আর ক্রমাগত পতনের গল্প এমন তীব্র, তীক্ষ্ণ, শ্লেষাত্মক, শিউরে ওঠার মতো গদ্যভাষায় লিখতে পেরেছেন আর কয়জন?
বইটি শুরু হয়েছে ২০০২ এর ‘অপারেশন ক্লিন হার্টের সমালোচনা দিয়ে। তারপর লেখক ফিরে গেছেন একাত্তর এ। একে একে করে গেছেন একসময়ের উত্তেজিত ছাত্রনেতা শেখ মুজিবের পরবর্তীতে রাজনৈতিক মহানেতা হয়ে ওঠার গল্প, তার উত্থানের গল্প, প্রস্থানের গল্প। যারা শেখ মুজিবকে একেবারে দেবতার আসনে বসিয়ে দেন আবার যারা তাকে শুধু কুচক্রীর কাতারে ফেলে দেন তাদের জন্য লেখকের কথাগুলো অসাধারণ লেগেছে মুজিবকে আমরা প্রচণ্ড সমালোচনা করতে পারি, তিনি সমালোচনার উর্ধে নন, অনেক সীমাবদ্ধতা তাঁর ছিল; কয়েক দশক ধ'রে তো কোটি কোটি বাম প্রাণভ'রে তার সমালোচনা করছে। কিন্তু সত্য হচ্ছে তিনি মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক, বাঙলাদেশের মহাস্থাপতি। …...মুজিবের হত্যাকাণ্ড পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে নৃশংস ও অভাবিত হত্যাকাণ্ডগুলোর একটি। সবচেয়ে বিশাল ও ভারি যে লাশটি বাংলাদেশ নিজের বুকের কবরে বয়ে চলছে, সেটি মুজিবের লাশ
মেজর জিয়াকে লেখক স্রেফ ঐতিহাসিক আকস্মিকতা এবং পরিস্থিতির ভাগ্যবান পুত্র বলেছেন। একজন সেনানায়কের কাছ থেকে দেশনেতাসুলভ আচরণ প্রত্যাশা করা যায় না সেটাই লেখক বোঝাতে চেয়েছেন এভাবে জিয়ার কাছে চাইতে পারি না যে তিনি হবেন জর্জ ওয়াশিংটন। জিয়া যা, তাই হয়েছিলেন- মিনি আইউব খাঁ। সামরিক একনায়কেরা দেখা দেয় দেবদূতের মতো, এমনকি ইয়াহিয়ার মতো খুনিকেও মনে হয় জেসাস ক্রাইস্ট। তারা বলে, দেশকে উদ্ধারের জন্যেই তারা দায়িত্বভার নিয়েছে, তাদের কোন ক্ষমতার লোভ নেই, সৈনিক থাকতেই তারা পছন্দ করে,যথাসময়ে তারা জনগণের হাতে ক্ষমতা দিয়ে আবার সেনানিবাসে ফিরে যাবে। যথাসময়টি আর আসে না
পেটে, মগজে, শিরা, উপশিরায় ভারতকে বহন করে মুখে মুখে ভারত বিদ্বেষ একধরণের ভণ্ডামি লেখক দারুনভাবে তুলে ধরেছেন এ বইয়ে। স্বৈরাচারে বহুমাত্রিকতা দানকারী এরশাদেরও সমালোচনা করেছেন কঠোর ব্যঙ্গাত্মকভাবে। প্রত্যেকের শাসনামলের শুরুতে প্রধান বিচারপতিদের কথাও উঠে এসেছে।বইয়ের ইতি টেনেছেন আবারো অপারেশন ক্লিন হার্টের নিন্দা, বিএনপি জামাত জোটের নিন্দা করে।
মুক্তিযুদ্ধ, শেখ মুজিবের শাসন, মেজর জিয়ার শাসন, এরশাদ, শেখ হাসিনা, বেগম জিয়ার শাসনকালের বিবরণ তির্যক ভাষায় ক্রমানুসারে বর্ণনা করেছেন।