নিছক একটা কবিতার বই নয় ভুঁইচাঁপার ঘ্রাণ। মোস্তফা হামেদীর কবিতা যাত্রার বাঁক ফেরাও বটে। বাহ্যিক অনুষঙ্গের দৃশ্যায়ন, মুগ্ধতা, ইমেজের ঘন অভিসার ছেড়ে কবি এইখানে যেন ঢুকে পড়েছেন অন্তর্লোকে। নিজের অন্দরে ডুব দিয়ে তুলে আনতে চাইছেন জাগতিকতার গভীরের কলতানকে। সেখানে যে সুর আছে, তা যেন অরণ্যের গহিনে পাথরের ফোকরে বয়ে চলা ছিপছিপে জলধারার মতো মৃদুমন্দ।
নিজের যাপনকে পরিস্রুত করে দার্শনিক বোধে উপনীত হওয়ার আকাঙ্ক্ষাও প্রবল ভুঁইচাঁপার ঘ্রাণ-এ। যেন তারুণ্যের উচ্ছলতা পার হয়ে কবি নতুন এক অভিজ্ঞতার দুনিয়ায় হাজির। পরিবার, সমাজ, সংসার, সংরাগ, বয়স সমস্ত কিছুর মিথস্ক্রিয়ায় নতুন কোনো ‘আমি’র দুয়ারে উপনীত। সেই আমি সামান্য। অসামান্যের সাথে গাঢ় সম্পর্কে অধীর। ভাষার ঘোরপ্যাঁচ নাই। বিপুল অলঙ্কার-বসনব্যসন-সাজসজ্জা ছেড়ে সমসময়ের বিচিত্র বিষয়কে ব্যঞ্জনাময় করেছেন বাকবিভূতির কৌশলী প্রয়োগে। রসের দিক থেকে কবিতাগুলি শান্ত ভাবের। এক অর্থে কবির জীবনবাসনা মূর্ত হয়ে উঠেছে নাতিদীর্ঘ কবিতাগুলিতে, যেখানে কবি খোলাসা করেন নিজের আকাঙ্ক্ষা এইভাবে— ‘সাধারণ কোনো জীবনের ভেতর ভুঁইচাঁপার ঘ্রাণ হবো ভাবি।’ বস্তুত এটাই এই কাব্যের প্রধান প্রেরণাবিন্দু।