প্রতিটি মানুষের জীবনেই গোপন সংবেদনশীল এমন অনেক গল্প থাকে, ঠাকুরবাড়ির মানুষগুলোও তার ব্যতিক্রম নয়। কাউকে ভালো কিংবা খারাপের ট্যাগ দিয়ে দেওয়ার মতো আমি কেউ-ই না। আমি একজন পাঠক-এবং তা হিসেবে সু-বিবেচক বলেই নিজেকে মনে হয়। আমার কাছে ভালো-খারাপের ডেফিনেশনটা আমার জন্যে বেশ যৌক্তিক।
বইটি না পড়ার বিকল্প কিছু নেই বলেই আমার মনে হয়। কেননা ঠাকুরবাড়ি শুধুই একটা বাড়ি নয়, যে বাড়ি থেকে বিশ্ব বিখ্যাত সব মাস্টারপিস সাহিত্যকর্মগুলোর জন্ম হয়েছে, সেটাকে উপেক্ষা করার শক্তি কারও নেই। শুধুই কি গল্প-উপন্যাস? সেই বাড়ির মানুষগুলোও অমর। এই পৃথিবী যতদিন টিকে থাকবে ততদিন টিকে থাকবে ঠাকুর এবং ঠাকুরবাড়ি। সুতরাং এটি নিছকই একটি বাড়ি নয় বরং জ্ঞানের একটা সমুদ্র। সেই সমুদ্রে মানুষ যত সাঁতরাবে জীবনকে মানুষ তত উপলব্ধি করবে। জ্ঞান-বিদ্যায়, চিন্তায় মানুষ ততো বড় হবে।
বইটি পড়ে সত্যিই আমি বাকরুদ্ধ। বারবার কেবল মনে হচ্ছে জীবন আসলেই একটা চিত্রনাট্য। যেখানে আমরা সবাই শুধু অভিনয় করে যাচ্ছি।
রবি ঠাকুরের সাহিত্যের পেছনের মানুষ ছিলেন কাদম্বরী। রবীন্দ্রনাথ যা লিখতেন তার সবটাই কাদম্বরী দেবীর। ঠাকুর ছিলেন তাঁরই শ্রুতিলেখক মাত্র। ঠাকুরবাড়ির কারসাজিতে তা প্রকাশিত হতো রবির নামে! শুধু একটা খন্ড সময়েই নয় বরং তিনি স্রেফ জানিয়েছেন, রবির সাথে সহমরণের আগ পর্যন্ত তিনি অবিরাম লিখে গিয়েছেন। সহমরণকে ঠাকুরবাড়ি বানিয়ে দিয়েছেন আত্মহত্যা! কি দারুণ এক মাস্টার-স্রোকস! রবীন্দ্রনাথ আর কাদম্বারী ছিলেন দু’জন দুজনার তাই ইতিহাসও বোধহয় ঘুরেফিরে বারবার তাদেরকে এক করে দেয়।
জানা অনেক গল্পই যখন সময় আমাদেরকে অজানা বানিয়ে দেয় তখন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বাকরুদ্ধ হওয়াটাই তো স্বাভাবিক। প্রতি পৃষ্ঠায় নতুন কিছু জেনেছি অবাক হয়েছি, কষ্ট পেয়েছি, বিরক্ত হয়েছি, রাগান্বিত হয়েছি সব শেষে মেনেও নিয়েছি। জীবন এমনি! নিজেকে শান্তনা দিতে কাদম্বরী দেবীর ঐ একটি লাইন বারবার পড়েছি আর মনে রেখেছি,
“জীবন কেবলই একটা চিত্রনাট্য যেখানে আমরা সবাই শুধু অভিনয় করে যাচ্ছি।”