‘সোনালি কাবিন’-এর মতো উচ্চাভিলাষী প্রকল্প বাংলা গীতিকবিতার বিশাল ভুবনে সম্ভবত আর একটিও নেই। প্রকল্পটি
প্রায় যেকোনো বিচারে মহাকাব্যিক। স্থান-কালের বিপুলতা আছে, বিপুল জনগোষ্ঠীকে আওতাভুক্ত করার প্রত্যয় আছে, এমনকি ঐতিহ্যের বিপুল পুরোনো উপাদানকে সসম্মানে প্রশ্রয়
দিয়েও জনগোষ্ঠীর জন্য নতুন ধর্ম প্রস্তাবের
ইশারা আছে। নায়ক-চরিত্রের কুলগৌরব নেই; কিন্তু আছে আরও বড় কিছু— নিজের কুলকেই মহিমাময় করে তোলার হিম্মত। সে সংগ্রামী। অসংখ্য প্রতিপক্ষ
তার। তবে কবিতার ময়দানে হাজির হওয়ার আগেই তার লড়াইপর্ব
শেষ হয়েছে। প্রবল প্রত্যয়ী একরাশ সিদ্ধান্ত
নিয়ে বেশ মোলায়েম
বয়ানের পসরা সাজিয়ে হাজির হয়েছে যুগপৎ দয়িতা আর পাঠকের দরবারে। বয়ানে উৎপাদন-সম্পর্ক আর ক্ষমতা-সম্পর্কের গভীর গোপন ভাঁজগুলো যথোচিত মূল্য পেয়েছে। সে এতটাই যে মার্কসীয় পরিভাষায়
সম্পর্কশাস্ত্রের নিরিখে কবিতাটি পাঠ করা চলে। ঐতিহ্যের নির্বাচন, মূল্যায়ন,
পুনর্গঠন ও প্রকল্পের
সামগ্রিকতায় এর রাজনৈতিক
সুর জাতীয়তাবাদী; অন্যদিকে
আবার গণতান্ত্রিক-সমাজতান্ত্রিক
মূল্যবোধের টুকরা-টাকরা অনিবার্য উপাদান হয়ে মিশে গেছে কবিতাটির
শরীরে এবং আত্মায়।