সম্ভবত বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে নন্দিত ও নিন্দিত গ্রন্থ এই "নারী"। উগ্র মৌলবাদ ও আমূল পুরুষতন্ত্রের রোষানলে পড়ে এই গ্রন্থ ১৯৯৫ সালে নিষিদ্ধ হয়, পরবর্তীতে ২০০০ সালে হাইকোর্টের আদেশে এটি পুনরায় মুদ্রিত হয়ে পাঠক জগতে ঠাঁই নেয়। সমালোচকদের মতে নারীবাদ সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ গবেষণা গ্রন্থ এটি৷ বইটি লেখার জন্য প্রথাবিরোধী লেখক হুমায়ুন আজাদ ৮১টি বিদেশী ও ৮০টি বাংলা পুস্তক, জার্নাল, প্রবন্ধ ও গবেষণা গ্রন্থের আশ্রয় নিয়েছেন। স্বাধীন বাংলাদেশে নারীবাদ সংক্রান্ত এটিই প্রথম পূর্ণাঙ্গ
গ্রন্থ।
বইটিতে ফুটে উঠেছে পুরুষতন্ত্র কর্তৃক নারী নির্যাতনের সুদীর্ঘ ইতিহাস, লৈঙ্গিক রাজনীতি ও নারীজাতির ঐতিহাসিক মহাপরাজয়। পাশাপাশি পশ্চিমা ও পূবদেশীয় সাহিত্যজগত খুঁড়ে লেখক বের করে এনেছেন নারীর চারদেয়াল-আবদ্ধকরণের চতুর ঐন্দ্রজালিক মহাকাব্য। সমালোচনা করেছেন রাসকিন-রুশো-রবীন্দ্রনাথের নারীসংক্রান্ত ভিক্টোরীয় যুগের মানসিকতা। গুঁড়িয়ে দিয়েছেন ফ্রয়েডের নারী সম্পর্কিত অপবিজ্ঞানমূলক ব্যাখ্যা। বায়োলজিকাল ডিফারেন্সকে পুঁজি করে কীভাবে শৈশব থেকে নারী ও পুরুষের মধ্যে লিঙ্গ রাজনীতির কদর্য প্রয়োগ সংঘটিত হয়ে আসছে, তাও লেখক দেখিয়েছেন বিস্তারিতভাবে। পুরুষতন্ত্রের বলপ্রয়োগকারী সংস্থা হিসেবে আইন, রাষ্ট্র, ধর্ম ও পরিবার কী করে কয়েক সহস্রাব্দ ধরে নারীকে বন্দি রেখেছে চারদেয়ালের মাঝে তাও ব্যাখ্যা করেছেন। দাসী যেমন দীর্ঘদিন দাসত্বের শেকলে আটকে থেকে একসময় গুণগান করে প্রভুর, তেমনি নারীদেরও এক বৃহদাংশ গেয়ে এসেছে পুরুষতন্ত্রের জয়গান। পুরুষতন্ত্রের কাছে এই নারীরাই শ্রেষ্ঠ নারী। লেখকের মতে, এই নারীরা নারীবাদের ভয়কংরতম শত্রু, সম্ভবত পুরুষের চেয়েও বড় শত্রু। সমগ্র গ্রন্থে লেখক উন্মোচন করেছেন এক অদেখা দিগন্ত, আবিষ্কার করেছেন কিছু কদর্যতম সত্য।