"এখন আর কেউ প্রেমে পড়ে না, উত্তেজিত হয় মাংসের ক্ষুধায়, আর ওই ক্ষুধাকে মনে করে প্রেম।" বইটি আপনার মগজে আগুন ধরাবে। কেননা বর্তমান সময়ে এরকম দাঁত কড়মড়ে শক্ত লেখার দেখা পাওয়া শুধুমাত্র বিরলই নয় বরং খড়ের গাতায় সূচ খোঁজার মতোই কঠিন ব্যাপার!
একজন মানুষ কতটা সাহসী হলে এভাবে বলতে পারে:-
"যারা পদামৃতপায়ী তারা রসালো পা চাটতেই পছন্দ করে, যে-পায়ে রস নেই বা রসের সম্ভাবনা নেই, সে-পায়ের সেবায় তারা জিভ বেশিদিন ক্ষয় করে না"
প্রথাবিরোধী লেখক হুমায়ূন আজাদ স্যার একজন দুর্দান্ত
মনীষীও বটে। যা লিখেছেন কিংবা বলে গিয়েছেন তা বর্তমানে ফুটে উঠছে সমাজ ব্যবস্থায়। তাইতো বইটির প্রথমেই তিনি আঘাত করে বসেছিলেন দেশের সমাজব্যবস্থাকে। ব্যাঙ্গাত্নক সুরে লেখক বলেন,
"আজকের বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষই বিশিষ্ট আর বিখ্যাত, পাড়ায় পাড়ায় এখন বাস করেন প্রসিদ্ধরা, গলিতে থাকেন অমরেরা।"
লেখক আফসোস করেছেন সৎ থাকতে গিয়ে যারা হারিয়েছেন সবকিছু তাদের জন্য। লেখক দুঃখ করে বলেন,
"আপনাদের জন্যে দুঃখ হয়। আপনাদের সমাধিতে কেউ একটা কাগজের ফুলও দেবে না।"
লেখক ক্ষমা চেয়েছেন সকল শহীদ বুদ্ধীজীবীদের কাছে। লেখক এদেশের মানুষদের সমালোচনা করে বলেন,
"লাশ আমরা খুবই পছন্দ করি; খুবই শ্রদ্ধা করি লাশকে। তাই আমরা জীবিতদের লাশে পরিনত করে লাশদের জীবিত করতে চাই।"
লেখক টানা স্রেফ ধুয়েছেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া, বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে। তিনি দুই নেত্রীর সমালোচনা করে বলেন,
"বাংলাদেশে দুজন, হাসিনা ও খালেদা, অনেকদিন ধরে বয়ে বেড়াচ্ছে পিতা ও স্বামীর লাশ; এবার খালেদা পেয়েছে লাশ বয়ে বেড়ানোর পুরুষ্কার। ... এরা কেউ নারীদের প্রতিনিধি নয়। তারা সবাই পুরুষন্ত্রের প্রতিনিধি; তারা উঠে এসেছে শক্তিমান পুরুষের কবর থেকে।"
তিনি বলেছিলেন,
"ক্ষমতা খুবই পিচ্ছিল প্রতারক বস্তু;- তা মহানায়কের মুঠোতেও চিরকাল থাকে না, একনায়কের মুঠোতেও চিরকাল থাকেনা।"
বাঙ্গালীর নিষ্ক্রিয়তায় বিরক্ত হয়ে লেখক বলেন,
"এ জাতি কোনো দশকের শুরুতে বা শেষপ্রান্তে বিকশিত হয় বিদ্রোহীরুপে; আবার অনেক দিনের জন্যে রূপান্তরিত হয়ে যায় একপাল নিরীহ মেষে।"
কঠিন সব সত্য এত সরল করে এই বাঙলার কতজন মুনিষী বলতে পেড়েছেন? শত কোটি পৃষ্ঠা আর লক্ষ লক্ষ বইয়ের ভিড়ে এ-যাবৎকাল যে কয়টি মাস্টারপিসের সাক্ষাৎ আমরা পেয়েছি তার মধ্যে “মাতাল তরনী” অন্যতম। বইটা আপনার মগজে রীতিমত একটা ঝড় তুলে দিবে। শব্দের পর শব্দগুলো যেন এক একটা বোমা, যার উত্তাপটা থেকেই যাবে প্রতিটি পাঠক/পাঠিকার তাজা শিরা উপশিরায়।