এই বইটি নিয়ে আমার একটা তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে, বইটির গুরুত্ব বুঝাতেই তা শেয়ার করার প্রয়োজন বলে মনে করছি। আমি বইটি সংগ্রহ করেছিলাম একটা ভ্যান গাড়ি থেকে। তখন সময় ২০০৯। আমি তখন স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে কলেজে পা দিয়েছি। রোজ সকালে একজন হুজুর এসে আমাদের চার ভাই-বোনকে কুরআন পড়াতেন। আমিও রোজকার নিয়ম অনুযায়ী সেদিন সালাম দিয়ে হুজুরের অনুমতি নিয়ে ঘরে প্রবেশ করি। কিন্তু “মানুষের ধর্ম” বইটি হাতে রাখাও যে পাপ সেটি আমি বুঝতে পারি নি।
বইটি আমার হাতে দেখামাত্রই হুজুর এমন এক বজ্র ধমক আমাকে দিলেন যে তার শব্দে এবং ভয়ে বইটি আমার হাত থেকে মাটিতে পড়ে যায়। তারপর হিংস্র বাঘের মত বইটিকে সুস্বাদু এক স্বাস্থ্যবান হরিণ মনে করে টেনে হিচড়ে, ছিড়ে, খুবলে তা কুটিকুটি করতে থাকে।
আমি ঐ-টুকুন বয়সে এটা বুঝতে পেরেছিলাম আসলে হুজুরের রাগটা বইটির উপর যতটা বেশি তারথেকেও বেশি বোধহয় রবীন্দ্রনাথের উপর।
ব্যাটা বিশ্ব-কবি হলে কি হবে? সে জাহান্নামী! হিন্দু!
মানুষ তার চিন্তার সমান বড়। এই বইটির কথা জানেন কিন্তু এখনো পড়া হয়নি সেই মানুষটার ফিলিংস আমি বুঝি। বইটিকে পেয়ে হারিয়ে আবার খুঁজে পেতে আমার সময় লেগেছিল ১১ বছর। রবীন্দ্রনাথের সকল সাহিত্য সব বই যতটা সহজ সংগ্রহ করা ঠিক ততটাই কঠিন এই একটা বই খুঁজে পাওয়া।
“The truth which is not reached through the analytical process of reasoning and does not depend for proof on some corroboration of outward facts or the prevalent faith and practice of the people—the truth which comes like an inspiration out of the context with its surroundings bring with it an assurance that it has been sent from an inner source of divine wisdom, that the individual who has realized it is specially inspired and therefore has his responsibility as a direct medium of communication of Divine Truth.”
এটি বই নয় চিন্তার সাগর। সেই সাগরের সন্ধ্যান আমি দিয়েছি, সেখানে ঝাঁপ দেওয়ার দায়িত্ব আপনার! জ্ঞানই একমাত্র মুক্তির পথ। টাকার পেছনে ছুটে চলা ইদুড় দৌঁড়ে কেউ জয়ী নয়, নয় কেউ তৃপ্ত। না কেউ কোনোদিন জয়ী হতে পেরেছে, না পেরেছে হতে তৃপ্ত। কিন্তু জ্ঞান আহরণে যে মজা যে তৃপ্ততা তা কেবল তারাই জানেন, যারা এখনো মনে করেন আসলে তারা কিছুই এখনো জানেন না!