মালাকারদের মাঝে একটা কিংবদন্তির প্রচলন আছে— হিমালয় কন্যা পার্বতীকে বিয়ে করবার সময় মহাদেব শিব শ্বেত মুকুট পরবার ইচ্ছে পোষণ করেন। এই ইচ্ছে পোষণ থেকেই জলে জন্ম নিল একধরনের গাছ— শোলা গাছ। বিশ্বকর্মা নানান ধাতব পদার্থে গহনা গড়েন, তো চিন্তায় পড়ে গেলেন শোলার মতো নরম জিনিসে কীভাবে মুকুট গড়বেন। এ-সময় আবার শিবের ইচ্ছেয় জল থেকে এক সুকুমার যুবক উত্থিত হলেন, সেই ছেলেই শোলা থেকে শিবের বিয়ের মুকুট-মালা তৈরি করে দিলেন। এত সুন্দর মালা দেখে সবাই মুগ্ধ হলেন, সেই থেকে ছেলেটির নাম হয়ে গেল মালাকার। আর তার বংশধররা হলেন মালাকার সম্প্রদায়। এই বিশ্বাস থেকেই মালাকার পেশাজীবীরা নিজেদের পেশাকে সম্মানের দৃষ্টিতে দেখেন। মালাকাররা শোলা দিয়ে মালা গাঁথেন, পুজোর-ঘরসজ্জার ফুল তৈরি করেন, পাখি, খেলনা, হাতপাখা, অলঙ্কার, পশুপাখিসহ নানাকিছু অপূর্বরূপে সৃজন করেন। এইভাবে একটি বিশেষ সম্প্রদায় শোলানির্ভর হয়েই জীবিকা নির্বাহ করেন।
বাংলার লোক— মালাকার সম্প্রদায়ের যাপিতজীবনের নানা অনুষঙ্গ— ইতিহাস, ঐতিহ্য, রুচিবোধ, সংস্কৃতি এবং শোলাশিল্প সম্পর্কিত বিস্তর আলাপ উঠে এসেছে এই গ্রন্থে। মাগুরা, ঝিনাইদহ, নওগাঁ, শেরপুর ও কোলকাতার মালাকারদের জীবন ও শিল্পকেন্দ্রিক রচিত এই গ্রন্থ। তবে বাড়তি আকর্ষণ দেশভাগের কবলে পতিত কালিপদ মালাকারের ট্রাজিক অথচ শিল্পিত জীবন!