ছোটগল্পের কালজয়ী স্রষ্টা হিসেবে রবীন্দ্রনাথের কৃতিত্ব আমাদের বিস্মিত করে। বাংলা ছোটগল্পকে তিনি হাতে ধরে হাঁটতে শিখিয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, তিনিই প্রথম ছোটগল্পে পৃথিবীর সব মানুষের অনুভব-উপলব্ধিকে শৈল্পিক মহিমা দিয়েছেন। এই মহিমান্বিত ভূখণ্ডে কেবল বড়দের অধিকারই প্রতিষ্ঠিত হয়নি, সেখানে শিশু-কিশোরদের জন্যও রয়েছে অভাবনীয় সব শিল্পসম্পদ যা অল্পবয়সীদের পরিণত মানুষ হয়ে ওঠার অনুপ্রেরণা হিসেবে অসাধারণ। সহজ কথা সহজ করে বলা যেমন কঠিন, তেমনি ছোটদের চিত্ত ও চিন্তার উপযোগী ভাব ও বিষয়কে ধারণ করে ছোটগল্প লেখার কাজটিও সহজ নয়। শিশু-কিশোরদের প্রাণের মানুষ হিসেবে তিনি তাদের মনের কথাকেই সহজ-সরল ভাষায় গল্পের অবয়বে উপস্থাপন করেছেন। তার কোনো কিশোর গল্পেই কাহিনি বা ঘটনার ঘনঘটা নেই। শিশুতোষ ভাব ও কল্পনার সমান্তরালে নিজেকে স্থাপন করে তিনি তাদের ভাষায়ই তাদের কথা বলেছেন। অর্থাৎ রবীন্দ্রনাথের কিশোর গল্পে আমরা যে রবীন্দ্রনাথকে পাই, গণিতের হিসাবে তার বয়স যতই হোক না কেন, ভাব, কল্পনা ও ভাষার ঘনত্বে তিনি কিশোর রবীন্দ্রনাথ। তথ্যপ্রযুক্তির অবাধ প্রবাহের এই যুগে বইয়ের সঙ্গে শিশুকিশোরদের দূরত্ব বেড়েছে এ কথা ঠিক, কিন্তু বইয়ের গুরুত্ব অনুধাবনে ব্যর্থ হলে ভবিষ্যতের বিপর্যয় এড়ানো কঠিন। রবীন্দ্রনাথের কিশোর গল্পগুলোকে এই বিপর্যয়ের বিরুদ্ধে তুমুল প্রতিবাদ হিসেবে পাঠ করা যায়।