খেলারাম খেলে যা একটি অবিস্মরণীয় উপন্যাস। যৌনতা আর শরীরী সম্পর্কের বিস্তৃত বিবরণের জন্য প্রকাশের পরপরই এ উপন্যাস নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। অশ্লীলতার অভিযোগে লেখককে প্রচুর নিন্দামন্দ শুনতে হয়। কিন্তু সাহিত্যের সব ধরনের পাঠক সাগ্রহ পাঠ করেছেন এই বই। আপাদমস্তক এক ভোগী পুরুষের ভোগ
্য সামগ্ৰীরূপে তরুনী ভার্যা থেকে ভগ্নী সমান বয়সী রমনীদের মধ্যে রমনীমোহন হয়ে রমনের যে রমনীয় রচনায় যৌনতাকে সস্তার মোড়কে না মুড়িয়ে পাঠকের মাঝে সরস সুন্দর উপমা দিয়ে উপভোগ্য করে তুলেছে তার নাম-
খেলারাম খেলে যা।
ধাঁধার উপস্থাপকের মনস্তত্ত্ব কে নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত পাঠকের মনের সাথে মনকষাকষি পর্যায়ে যাওয়ার আগেই এমন কিছু বাঁক এসেছে যে ঐ অভিযোগ করার ফাঁকটা কোন ফোকরে গলে যাবে তা টেরই পাবেন না। সেসময়ের সুবিধাবাদী সাহিত্যের সরস চর্চার মাধ্যমে চর্চিত না হয়ে বরং এরকম সাহসী লেখনী শামসুল হকের শৌর্যেরই পরিচয় দেয়।
এসময়ে লিখলে তো জাত গেলো রব তুলে জাতি তাকে যাঁতাকলে পৃষ্ট করে শেষ মেশ চরম সময়ে পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে পগার পার হতো রাত পোহানোর আগেই।ভাগ্যিস সেকালে জন্মেছিলেন! আর লিখতে পেরেছিলেন মাস্টারপিস এই বইটি।
গল্পটা বাবরের, একজন নারী শিকারীর, একজন খেলারামের যাকে ইংরেজিতে আমরা বলি Playboy। সে একজন বহুগামী বা Polygamist। উপন্যাসের পুরো লেখাই বাবরের অনবরত নারীসঙ্গ বদল এবং তার শারীরিক চাহিদা চরিতার্থ করার বিভিন্ন উপায়, কলাকৌশল, যৌনতা কখোনো রগরগে বয়ান কখোনো শিল্পীর তুলির মত কখোনো কবিতার মাধ্যমে। নারীসঙ্গের ক্ষেত্রে যার পছন্দ সতের থেকে বিশ বছরের উঠতি বয়সী মেয়েদের যাদের সে তুখর কথাযাদুর মাধ্যমে পটিয়ে বিছানায় নিয়ে যেতে পারে। সে শারীরিক চাহিদা পূরণে বিয়ে করে বন্ধনে যেতে ইচ্ছুক নয়, জোরাজুড়ি করে ধর্ষণেও বিশ্বাসী নয়। তাই বলে সে গণিকালয়েও যায়না। এমনি দূর্দান্ত এক প্লটের মাধ্যেমে যে বই শামসুল হক লিখেছেন তার সাহস এবং সক্ষমতা ভাবতে গিয়ে বিষ্ময় যেন কাটেই না।