কে খুন হলো? লাশের চেহারায় এত রহস্য কেন? লাশের মোবাইলে একটা কল এসেছে, রিং বাজছে অনবরত। কে কল করছে?
ওদিকে সত্যকে খুঁজে ফিরছে হৃদয় কুমার৷ ফলে দিনরাত পড়াশোনা আর নিমগ্ন চিন্তায় দিন কেটে যাচ্ছে তার৷ সত্যকে খোঁজার এই পবিত্র যাত্রায় সুলভ সবকিছুই সে পড়ে ফেলেছে৷ “ঈশ্বর এক এবং অদ্বিতীয়’–এই সিদ্ধান্তে পৌঁছে গিয়েছে বহু আগেই৷ বিভিন্ন ধর্ম আর ধর্মগ্রন্থ নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি শেষ করে সম্প্রতি ইসলামের সত্যতা নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেছে৷ অবাক হয়ে সে লক্ষ করছে, ইসলামের কথাগুলো সেই সনাতন যুগ থেকে একই বার্তা দিয়ে আসছে বারবার৷ পড়তে পড়তেই এক পর্যায়ে ইসলামের শেষ নবি বলে খ্যাত মুহাম্মাদের কথামালা আর জীবনীর সংরক্ষণ নীতিমালা দেখে হৃদয় কুমার তো পুরোপুরি তাজ্জব! এত সুনিপুণ নীতিমালা রক্ষা করে প্রায় দেড় হাজার বছর ধরে এত অপূর্ব এক সংরক্ষণ! কীভাবে সম্ভব?
সংরক্ষণ নীতিমালা জেনে-বুঝে নিশ্চিন্ত হওয়ার পরেই সে খুঁজতে শুরু করেছে শেষ নবির ব্যাপারে লিখিত বিশুদ্ধতম জীবনীগ্রন্থ। পেয়েও গিয়েছে সে ঠিক ঠিক, আর ভালোভাবে বুঝে-শুনে অধ্যয়নটাও শেষ৷ কিন্তু সমস্যা বেধেছে এর পরেই৷ হৃদয় আর কিছুতেই শান্তি পাচ্ছে না৷ নাওয়া-খাওয়া দুটোই শিকেয় উঠে বসে আছে৷ কারণ, জটিল এক প্যাঁচ লেগে গেছে৷ আচ্ছা, কোথায় লাগল সেই মরণজট?
প্রায় সাড়ে চৌদ্দশ বছর আগে হাজার হাজার মাইল দূরে ঘটে যাওয়া কিছু বিশুদ্ধ ঘটনার মুখোমুখি হৃদয়৷ স্থান-কালের সীমানা পেরিয়ে নিপুণ দক্ষতায় সংরক্ষিত ইতিহাসের ঘটনাগুলো সে আত্মস্থ করে নিয়েছে৷ মেধাবী ও পড়ুয়া পাঠক হিসেবে হৃদয়ের জন্য এটা অত্যন্ত সহজ আর মামুলি একটা কাজ৷ যা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে তার জন্য, তা হচ্ছে—ঘটনাবলির সব কটা সুতোকে এক জায়গায় গাঁথা৷ শুধু এক জায়গায় গাঁথলেই হবে না, সাথে এটাও যাচাই করে দেখতে হবে—সেসব আসলে কী ইঙ্গিত করছে? কী বলতে চাইছে?
ঘটনাগুলো যা ইঙ্গিত করবে তা নিরপেক্ষভাবে, সততার সাথে যাচাই আর বিশ্লেষণ করতে পারবে তো হৃদয়? মস্তিষ্ক বুঝে নিলেও হৃদয় কুমারের অনভ্যস্ত অন্তর কি মানতে চাইবে নিজের জগতে এতদিনের অনাবিষ্কৃত কোনো সত্যকে? সমর্পিত হতে পারবে সে নতুন করে খুঁজে পাওয়া কোনো সত্যের সামনে? এটাই কি সেই মহাচ্যালেঞ্জ নয়, যা সনাতন যুগ থেকে আজ অবধি চলে এসেছে? সত্যকে জেনে বুঝে নেওয়ার পরে একজন মানুষ কি তা মেনে নেবে, নাকি অস্বীকার করবে?
ইতিহাসের পাঠ হৃদয় কুমারের সামনে প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছে—মুহাম্মাদ নামের এই অনক্ষর আনপড় মানুষটা আসলে কে? কীভাবে সেই রুক্ষ মরুতে শান্ত আর কোমল বাতাসের এমন সুন্দর এক ঝড় তুললেন স্মিত হাসির অধিকারী এই মানুষটা? প্রায় দেড় হাজার বছর পরেও হৃদয় কুমারের মানসে-অনুভবে সেই ঝড়ের ঝাপ্টা এসে লাগছে বারবার! আসলেই তো, কে উনি?