জার্মান দেশের কৃষকযুদ্ধ ১৮৫০ সালে প্রথম প্রকাশিত হয় এবং পরবর্তীকালে শ্রমজীবী মানুষের, বিশেষত দরিদ্র ও প্রান্তিক কৃষকশ্রেণির বিদ্রোহ ও সংগ্রাম বোঝার জন্য সারা পৃথিবীতে এটি একটি আকর গ্রন্থ হয়ে ওঠে। এছাড়া শ্রমজীবী মানুষের লড়াই ও বিপ্লবের যে চিরায়ত আর্থ-সামাজিক এবং রাজনৈতিক ব্যাকরণ কার্ল মার্ক্স ও ফ্রিদরিখ এঙ্গেলস রচনা করেছেন, তা বোঝার জন্যও জার্মান দেশের কৃষকযুদ্ধ একটি আদর্শ নমুনা। মূলত ফরাসি বিপ্লবের সাথে জার্মান দেশের কৃষকযুদ্ধের সাদৃশ্য ও পার্থক্য বোঝার জন্য এঙ্গেলস এই বই রচনা করেছিলেন। পরবর্তীকালে দেখা গিয়েছে, মানব ইতিহাসে শ্রমজীবী মানুষের লড়াইয়ের সফলতা ও ব্যর্থতার কারণ অনুসন্ধান করতে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রামাণ্য গ্রন্থ। যিশুখৃষ্ট ধর্মীয় প্রাঙ্গণে উল্টে ফেলেছিলেন অর্থ-বিনিময়কারীদের এবং ঘুঘু বিক্রেতাদের টেবিলগুলো। পয়গম্বর মুহাম্মদ মূলত মক্কার নিপীড়িত জনগোষ্ঠী এবং মদিনার কৃষকদের নিয়ে (যারা আওস ও খাজরাজ নামে পরিচিত ছিলেন) একটি রাষ্ট্র গঠন করেছিলেন। আর জার্মানদেশের কৃষকযুদ্ধে ঠমাস ম্যুনসার, নিকলাস হাউজেনের হান্স ব্যোহাইম, নিকলাস স্টর্খ এবং আরো অন্যান্যরা নিয়েছিলেন সেকালের পয়গম্বরী ভূমিকা। তারা খৃষ্টধর্মের মধ্য দিয়েই কৃষক আন্দোলনগুলোকে সচল রেখেছিলেন। বৃটিশ ভারতে হাজী শরীয়তুল্লাহ, দুদু মিয়া এবং তারপর অন্তত নয়া মিয়া পর্যন্ত পরিচালিত ফরায়েজি আন্দোলনসহ ধর্মীয় আন্দোলনগুলোতে অনেক সীমাবদ্ধতা থাকার পরেও এঙ্গেলসের দৃষ্টিতে এগুলো সবই শ্রেণি আন্দোলন। কিন্তু কেন? তা হৃদয়ঙ্গমের জন্য এই বই পাঠ অত্যন্ত জরুরি।