এলেবেলে (১ম পর্ব)” বইটির প্রথম দিকের কিছু কথাঃ
সম্প্রতি একটি অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে পড়েছিলাম। এলেবেলে লেখা সেটা দিয়েই শুরু করা যাক। বৈশাখী মেলায় গিয়েছি চার কন্যাকে সঙ্গে করে। তিনটি আমার নিজের, অন্যটি ধার করা। গিয়ে দেখি কুম্ভমেলার ভিড়—ঢাকা শহরের অর্ধেক লােক এসে উপস্থিত। মাটির হাঁড়িকুড়ি যাই দেখছে তাই তারা কিনে ফেলছে। অনেকটা কচ্ছপের মতাে দেখতে কি যে বিক্রি হচ্ছে খুব সস্তায়-এক টাকা পিস। সবাই কিনছে, আমিও কিনলাম। তারপর কিনলাম দু'খানা রবিঠাকুর। এবারের মেলায় রবিঠাকুর খুব সস্তায় বিক্রি হচ্ছে।<br> চার টাকা জোড়া। আমার ছােট মেয়েটি রবিঠাকুরকে নিয়ে আছাড় খেয়ে পড়ল। তার কিছু হলাে না, মহাকবি দু'টুকরা হয়ে গেলেন। কান্না থামাবার জন্যে আরেকটি কিনতে হয়। কিন্তু একবার কোনাে দোকান ছেড়ে এলে আবার সেখানে ঢােকা অসম্ভব। অন্য একটি ঘরে উঁকি দিলাম। বিনীত ভঙ্গিতে বললাম, আপনাদের রবিঠাকুর আছে? দোকানি আমাকে বেকুব ঠাওরালাে কিনা জানি না, এক বুড়াের মূর্তি ধরিয়ে দিল। বুড়ােটি খালি গায়ে বসে আছে, হাতে হুঁকো। বাতাস পেলেই সমানে মাথা নাড়ছে। সাদা চুল সাদা দাড়ি-রবিঠাকুর যে এতে সন্দেহের কিছুই নেই। আমরা তালের পাখা কিনলাম, মাটির কলস কিনলাম। শােলার কুমির কিনলাম (কিছুক্ষণের মধ্যেই টিকটিকির মতাে এর লেজ খসে পড়ল)। দড়ির শিকা, বাঁকা হয়ে দাঁড়ানাে (কলসি কাঁখে) বিশাল বক্ষা বঙ্গ ললনা কিনলাম। আমার কন্যারা দেখলাম দেশীয় সংস্কৃতির প্রতি গাঢ় অনুরাগ নিয়ে জন্মেছে। যাই দেখছে তাই তাদের চিত্তকে উদ্বেলিত করছে, তাই কিনবে। এক সময় এদের পিপাসা পেয়ে গেল।