আমেরিকান ইগল থেকে লেভিস্ত্রসের বোর্ডরুমে স্বাচ্ছন্দ্যে বিচরণ করা, বাংলাদেশের গারমেন্টস শিল্পের একজন শীর্ষ নির্বাহী বাংলাটেক্স গ্রুপের মার্চেন্ডাইজিং ডাইরেক্টর সারোয়ারকে বারবার ফিরে ডাকে তার পূর্ব পরিচয়। তার মননে এখনো সে চাঁদপুর ডিগ্রি কলেজের ফুটবল টিমের গোলকিপার মাত্র— যার বেড়ে ওঠা মিঠাপুকুর গ্রামে এবং মফস্বলের সরলতায়— দশটা গোল বাঁচিয়ে একটা গোল খেলে সে হেরে যাবে। তার শ্রেণিসংকোচ কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে, আর্থিক ভাবে পতনের দিকে ধাবিত, অটল অহমিকা সম্পন্ন চাঁদপুরের জমিদার পরিবারের মেয়ে সাহিদার সাথে বিয়ে। ক্রমেই সাহিদা আবিষ্কার করে, প্রেম নয়, করুণার আলোড়ন নয়, সারোয়ারের সাথে সম্পর্ক শুধু নির্ভরতার আর শরীরসর্বস্বতার। সারোয়ার ও বুঝতে ব্যর্থ হয়, এই সাবেক সামন্ত কন্যার মন। অফিস এবং পরিবার উভয় ক্ষেত্রেই চরম চাপের মুখে থাকা সারোয়ার এক অভূতপূর্ব বিপদের সম্মুখীন হয়— গাড়ি চালানোর সময়ে একটি নিম্নবিত্ত পরিবারের তিনজন সদস্যকে মারাত্মকভাবে আহত করে। আহতদের বাঁচানোর জন্য গাড়ি থেকে নামলেও পাবলিকের হাতে মার খাওয়ার ভয়ে দুর্ঘটনার স্থান থেকে পালিয়ে যায় সারোয়ার। তারপর বিবেকের তাড়নায় নিজের পরিচয় লুকিয়ে ঘটনাস্থলে ফিরে এসে আরও কঠিন বিপদে জড়িয়ে পড়ে এবং চরম নির্যাতনের মুখোমুখি হয়। সারোয়ারের ভেতরে জন্ম নেয় দ্বিধা। সে পরিষ্কারভাবে উপলব্ধি করে, মার্চেন্ডাইজিং ডিরেক্টর সারোয়ারের লেবাসটাই পাল্টেছে কিন্ত সে এখনো রয়ে গেছে, চাঁদপুর ডিগ্রী কলেজের ফুটবল টিমের গোলকিপার। সবার শেষে নিম্নবিত্ত থেকে এলিট হওয়া সারোয়ার কীভাবে, তার মধ্যবিত্ত পলায়নপরতা থেকে মুক্তি পেতে ব্যর্থ হয় সেই গল্প, এই দুর্ঘটনায় কবি। ‘দুর্ঘটনায় কবি’ সমসাময়িক বাংলাদেশের কর্মজীবী মধ্যবিত্ত একজন মানুষের লড়াইয়ের গল্প। একজন মিডিওকারের সুপিরিয়রে উত্তরণের গল্প। তার পতন ও চলমান সিস্টেমের অংশ হয়ে গিয়ে মানবিক সত্তা হারানোর বিনিময়ে পুনরুত্থানের গল্প। কীভাবে আমাদের সমাজ টাকার কাছে বারবার পরাজিত হয়, কীভাবে পুরাতন এলিটদের থেকে নব্য এলিটদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরিত হয়, কিভাবে আমাদের ইনসিকিউরিটিগুলোর কারণে নব্যমধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্তের মধ্যে একটা আপসকামী মানসিকতা তৈরি হয় এবং কিভাবে এই রাষ্ট্রের নিষ্ঠুর যন্ত্রগুলো নিম্নবিত্তের সাথে মধ্যবিত্তের বিভাজন করে তার নির্যাতনের মাত্রা ঠিক করে সেই বর্ণবাদী সিস্টেমের কথা এসেছে এই উপন্যাসে।