“জহির রায়হান” একটি সাবজেক্ট, যাকে নিয়ে, যার সৃষ্টি-কর্ম নিয়ে অনায়াসেই একটা গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করা যায়। কথাটা মোটেও বাড়িয়ে কিংবা আবেগ থেকে বলছি না। একটা মানুষটার চিন্তা কতটা প্রকট থাকলে সে বলতে পারে,
“আসছে ফাল্গুনে আমরা কিন্তু দ্বিগুণ হবো”!
এই একটা মাত্র লাইনের মৃত্যু কি কোনোদিন হবে? কেন হবে না, কেন তা সম্ভব নয়, তা বুঝতে হলে পৌছাতে হবে তার কথার গভীরতায়। পড়তে হবে “আরেক ফাল্গুন”। এই একটা উপন্যাস আমাকে আজন্ম অতৃপ্ত করে ছেড়েছে।
উনার লেখা প্রথম কোনো বই হিসেবে আমি পড়েছিলাম “হাজার বছর ধরে”। পড়তে বাধ্য হয়েছিলাম বলেই পড়েছিলাম এটি। কেননা ভাগ্যবশত এটি আমাদের পাঠ্য ছিল। নবম-দশম শ্রেণি পড়ুয়া একটা বাচ্চা সাহিত্য বুঝবে কতটুকু? ঐ-টুকুন বয়সে সাহিত্য তেমন না বুঝতে পারলেও বুঝতে পেরেছিলাম গল্প। রোজকার দেখা একই দৃশ্যগুলোকে আমি অন্য রকম ভাবে দেখতে শুরু করেছিলাম।
পাঠক হিসেবে আমার রুচির উন্নতি যখন শুরু হতে থাকে আমার আত্মার তৃপ্ততার জন্য আমি আরও বেশি করে জহির রায়হান পড়তে থাকি। সেই সাথে জীবনে আর কোনো উপন্যাস আমি এতবার পড়ি নি যতবার আমি পড়েছি:- “হাজার বছর ধরে”।
উনার প্রতি মুগ্ধতা আর ভালো-লাগা জ্যামিতিক হারে বাড়তে শুরু করে উনার “শেষ বিকেলের মেয়ে” পড়ার পর থেকে। আর উনাকে নিয়ে যে গবেষণার প্রয়োজন আমি তা বুঝতে পারি উনার, বরফ গলা নদী, কয়েকটি মৃত্যু পড়ে।
আমার মত ক্ষুদ্র মানুষও যখন চিন্তাশীল হয়ে উঠে জহির রায়হানে, সেখানে বিজ্ঞ এবং বিবেচক পাঠক/পাঠিকারা তো জহির রায়হানের নেশায় বুঁধ হয়ে থাকবেন। একবার যে জহির রায়হান পড়েছে সে আজীবন তার সৃষ্টিকর্মগুলো হণ্যে হয়ে খুঁজবে। সেই মানুষগুলোর জন্যে জহির রায়হানকে আরও সহজ করার প্রয়াসেই আমরা এনেছি “দুই-ডজন” নামক এই মাস্টারপিসটি। যেখানে জহির রায়হানের জীবনে রচিত সকল সৃষ্টিকর্মগুলো একসাথে পেয়ে যাবেন। কোয়ালিটি,বাইন্ডিং কতটুকু প্রিমিয়াম হলে একজন পাঠক/পাঠিক তাতে তৃপ্ত হতে পারে তার সবটুকোই রেখেছি “দুই-ডজনে”। সবশেষে জহির রায়হান এমন এক নেশা, যে নেশায় উদ্বুদ্ধ করে সকল শ্রেণির সকল স্তরের মানুষ।