নিজের ঘোল কে কেউ টক বলে না, নিজের মা'কে কেউ বলে না, বেশ্যা! তেমনি নিজের ধর্মকেও কেউ খারাপ বলে না। মানুষের নিকট আজ ধর্মের প্রকার মাত্র দুটি:-১/ আমার ধর্ম, ২/ তোমার ধর্ম। তবে আমার ধর্মটা হচ্ছে শ্রেষ্ঠ ধর্ম।
“তোমা হইতে আমি উত্তম' এই হল ধর্মগুলোর মূল কথা।”
তাই ধর্ম আটকে যায় ভালো আর মন্দে কিন্তু দর্শন আটকায় ব্যক্তির চিন্তায় আর জ্ঞানে। সেক্ষেত্রে দর্শন হচ্ছে সমুদ্র অন্যথায় ধর্মগুলো তার তুলনায় ছোট নালা।
যদি আমরা বর্তমান বিশ্বের প্রায় ৪,৩০০টি ধর্মের কথা বিবেচনা করি, তাহলে কোনো একটি নির্দিষ্ট ধর্মের সঠিক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে ১/৪৩০০, যা আনুমানিক ০.০০০২৩ বা ০.০২৩ শতাংশ। এটি ১২ বার টানা কয়েন ছুড়ে প্রতিবার 'হেডস' পাওয়ার চেয়েও কম সম্ভাবনাময়। তবুও, মানুষ যে যার ধর্মকে আঁকড়ে ধরে বলছে যে একমাত্র তার ধর্মই সঠিক, আর বাকি সব মিথ্যা!
ধর্ম সত্য না মিথ্যা এটি ডিপেন্ট করে ব্যক্তির দর্শনের উপর। 'চশমা খুললে আপনি অন্ধ হয়ে যাবেন' এই যুক্তিতে অগাধ বিশ্বাসী মানুষগুলো তাদের জীবনে একটিবারের জন্যও চশমা কখনো খোলে দেখেন না। তাই, তারা বাঁচতে শেখার আগেই মরে গেছে। দেখার আগে হয়ে গেছে অন্ধ।
জীবনকে বুঝতে হলে টিনের চশমা টা খোলা দরকার। অন্তত একবার সাহস করে কিছু সময়ের জন্যে হলেও তা করা দরকার। আর তা এড়িয়ে যাওয়া মানুষগুলোর জন্যেই কেবল প্রযোজ্য হবে স্বামী বিবেকানন্দের এই গল্পটি:-
“একটি ব্যাঙ একটি কুয়ার মধ্যে বাস করিত। সে বহুকাল সেইখানেই আছে। যদিও সেই কুয়াতেই তাহার জন্ম এবং সেইখানেই সে বড় হইয়া উঠিয়াছে, তথাপি ব্যাঙটি আকারে অতিশয় ক্ষুদ্রই ছিল। অবশ্য তখন বর্তমান কালের ক্রমবিকাশবাদীরা কেহ ছিলেন না, তাই বলা যায় না, অন্ধকার কূপে চিরকাল বাস করায় ব্যাঙটি দৃষ্টিশক্তি হারাইয়াছিল কিনা; আমরা কিন্তু গল্পের সুবিধার জন্য ধরিয়া লইব তাহার চোখ ছিল। আর সে প্রতিদিন এরূপ উৎসাহে কুয়ার জল কীট ও জীবাণু হইতে মুক্ত রাখিত যে, সেরূপ উৎসাহ আধুনিক কীটাণুতত্ত্ববিদ্গণেরও শ্লাঘার বিষয়। এইরূপে ক্রমে ক্রমে সে দেহে কিছু স্থূল ও মসৃণ হইয়া উঠিল। একদিন ঘটনাক্রমে সমুদ্রতীরের একটি ব্যাঙ আসিয়া সেই কূপে পতিত হইল।
কূপমণ্ডূক জিজ্ঞাসা করিল, ‘কোথা থেকে আসা হচ্ছে?’
‘সমুদ্র থেকে আসছি।’
‘সমুদ্র? সে কত বড়? তা কি আমার এই কুয়োর মত বড়?’ এই বলিয়া কূপমণ্ডূক কূপের এক প্রান্ত হইতে আর এক প্রান্তে লাফ দিল।
তাহাতে সাগরের ব্যাঙ বলিল, ‘ওহে ভাই, তুমি এই ক্ষুদ্র কূপের সঙ্গে সমুদ্রের তুলনা করবে কি করে?’
ইহা শুনিয়া কূপমণ্ডূক আর একবার লাফ দিয়া জিজ্ঞাসা করিল, ‘তোমার সমুদ্র কি এত বড়?’
‘সমুদ্রের সঙ্গে কুয়োর তুলনা করে তুমি কি মূর্খের মত প্রলাপ বকছ?’
ইহাতে কূপমণ্ডূক বলিল, ‘আমার কুয়োর মত বড় কিছুই হতে পারে না, পৃথিবীতে এর চেয়ে বড় আর কিছুই থাকতে পারে না; এ নিশ্চয়ই মিথ্যাবাদী, অতএব একে তাড়িয়ে দাও।”
হে ভ্রাতৃগণ, এইরূপ সংকীর্ণ ভাবই আমাদের মতভেদের কারণ। আমি একজন হিন্দু—আমি আমার নিজের ক্ষুদ্র কূপে বসিয়া আছি এবং সেটিকেই সমগ্র জগৎ বলিয়া মনে করিতেছি! খ্রীষ্টধর্মাবলম্বী তাঁহার নিজের ক্ষুদ্র কূপে বসিয়া আছেন এবং সেটিকেই সমগ্র জগৎ মনে করিতেছেন! মুসলমানও নিজের ক্ষুদ্র কূপে বসিয়া আছেন এবং সেটিকেই সমগ্র জগৎ মনে করিতেছেন!
বি:দ্র:- “বইটি পড়া যতটা গুরুত্বপূর্ণ তারথেকেও অধিক গুরুত্বপূর্ণ আজীবন তা সংগ্রহে রাখা।