বাংলাদেশের অর্থনীতি বিষয়ক আলোচনায় ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব এর বই নতুন মাত্রা যোগ করবে। অনুপুঙ্খ, তথ্য সমৃদ্ধ, বিশ্লেষনী এবং সহজবোধ্য এই বই পাঠকদের কেবল প্রচলিত ব্যাখ্যার বাইরে চিন্তা করতেই সাহায্য করবে তা নয়, বাংলাদেশের অর্থনীতির ভবিষ্যৎ পথরেখা তৈরিতে উৎসাহীদের জন্যেও সহায়ক হবে। ড. আলী রীয়াজ, ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর, রাজনীতি ও সরকার বিভাগ, ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাষ্ট্র।
‘বাংলাদেশ, অর্থনীতির ৫০ বছর’ বইয়ে বহু তথ্য-উপাত্তের সমাহার সত্ত্বেও প্রতিটি অধ্যায়ের আলোচনা সাধারণ পাঠকের জন্য সহজবোধ্য ও সাবলীল হয়ে উপস্থাপিত হয়েছে। এটি নিঃসন্দেহে অনেক কঠিন কাজ। বইটির শেষ অধ্যায়ে অর্থশাস্ত্রের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্বের আলোকে পঞ্চাশ বছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থান বোঝার এবং সংক্ষেপে তত্ত্বগুলোর সীমাবদ্ধতা আলোচনার প্রয়াস লক্ষণীয়। অগণিত নিত্য-নতুন তত্ত্বের তুলনায় এ প্রয়াস সংক্ষিপ্ত ও স্বল্প হলেও বাংলাদেশের অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যায় প্রাসঙ্গিক। এক্ষেত্রে লেখকের প্রয়াস প্রশংসনীয়। পুরো বইটির পরতে-পরতে লুকিয়ে আছে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার ভিত্তিক একটি গণতান্ত্রিক নাগরিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের আকাঙ্ক্ষা। লেখক অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত পরিসরে বিভিন্ন তথ্য-প্রমাণের আলোকে পঞ্চাশ বছরের অর্থনীতিকে সাধারণের কাছে সুখপাঠ্য করে উপস্থাপনের চেষ্টা করেছেন। ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর, অর্থনীতিবিদ। অধ্যাপক, উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
নিও-লিবারেলিজমের পক্ষ-বিপক্ষের গতানুগতি আলোচনার বাইরে এসে উন্নয়ন দর্শনের যে চমৎকার বয়ান উপস্থাপন করেছেন লেখক, তা পাঠক আবেদন তৈরি করবে। ড. মারুফ মল্লিক। গবেষক ও কলামিস্ট, সমাজ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক।
বিগত ৫০ বছরের অর্থনৈতিক উত্থান-পতনের বস্তুনিষ্ঠ, সাহসী ও সময়পোযোগী বিবরণ। ড. গোলাম রব্বানী, ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস, দ্য হেগ ইউনিভার্সিটি অব এপ্লায়েড সায়েন্সেস নেদারল্যান্ডস।
স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে বাংলাদেশের অর্থনীতির সামগ্রিক চিত্র তুলে আনার এক অনন্য প্রয়াস “বাংলাদেশ অর্থনীতির ৫০ বছর’ গ্রন্থটি। একটি চমৎকার রেফারেন্স গ্রন্থ। সুলতান মুহাম্মদ জাকারিয়া, দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক গবেষক, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। প্রাক্তন গবেষক, ইউনিভার্সিটি অব অ্যামস্টারডম ও বস্টন ইউনিভার্সিটি।
গণতন্ত্র, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠার শপথকে বুকে আঁকড়ে ধরে ১৯৭১ সালে অর্থনৈতিক শোষণের নাগপাশ ছিন্ন করে চিরস্থায়ী মুক্তির এক আলোকযাত্রা শুরু করেছিল বাংলাদেশ। অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে ২০২১ সালে স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের অর্থনীতিও সুবর্ণ জয়ন্তীতে পদার্পন করতে যাচ্ছে।
গণতন্ত্র, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে ৫০ বছর বয়সী বাংলাদেশের অবস্থান আজ ঠিক কোথায়, এই মূল্যায়ন তৈরির একান্তই দরকার। বাংলাদেশের সুবর্ণ জয়ন্তীতে আমাদের অতীতের ৫০ বছরের অর্জন ও ব্যর্থতা গুলোর সুনিপুণ পর্যালোচনা করা সময়ের দাবী। আমাদের প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তির হিসাব-নিকাশ, সরকার গুলোর সাফল্য ও ব্যর্থতার বিচার বিশ্লেষণ, অর্থনৈতিক ও সামাজিক নানান সব অর্জনের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে আত্মজিজ্ঞাসার মাধ্যমে নতুন পথপরিক্রমার সমন্বিত পরিকল্পনা তৈরি করাই সুবর্ণ জয়ন্তীর প্রধানতম উপলভদ্ধি হওয়া চাই।
স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে একটি মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হবার স্বপ্নকে ধারণ করে বিগত একদশক পথ চলেছে বাংলাদেশ, সেই সাথে একটি মর্যাদা সম্পন্ন জাতি হিসেবে নিজেকে বিশ্বের কাছে পরিচিত করার অঙ্গীকার করেছে। একসময়ে দারিদ্র্য ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রবণ দেশ হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশের এমন মর্যাদা নিশ্চয়ই একটা মহিমান্বিত বিষয়।
পাশাপাশি আগামী দিনের হীরক জয়ন্তী (৬০), প্লাটিনাম জয়ন্তী (৭৫) কিংবা শতবর্ষ জয়ন্তীতে বাংলাদেশ অর্থনীতি ও সম্পদ ব্যবস্থাপনার লক্ষ্য গুলো ঠিক কি কি, তার আলোচনা এখনই শুরু হয়ে যাওয়া ভালো। অর্থনৈতিক, মানবাধিকার, গণতন্ত্র, দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান, সামাজিক নিরাপত্তা ও বাকস্বাধীনতায় আগামীর দিনে আমাদের গন্তব্য কোথায় হবে, তা নিয়ে সমাজের সকল স্তরের বুঝাপড়া জরুরি বিষয়। তার জন্য চাই, দেশের নাগরিক সমাজ, প্রতিষ্ঠান, বুদ্ধিজীবী, রাষ্ট্র, সরকার, রাজনৈতিক দল ও প্রশাসনের মধ্যে অতীত অর্থনীতির সাফল্য ও ব্যর্থতার ধারা গুলোকে উপ্লভদ্ধি করা, যার মধ্যমে নতুন বুঝাপড়া গুলো তৈরি হবে। এই বুঝাপড়ার ভিত্তিতেই তৈরি হবে রাষ্ট্রীয় অর্জনের নতুন নতুন অন্তর্ভুক্তিমূলক রুপকল্প, লক্ষ্য ও অভিলক্ষ্য।