অনেকের হয়ত গায়ে লাগবে, কিন্তু এটি খাটি সত্য যে, প্রগতিশীল বলে এখন রক্ষণশীলতার পরিচয়টাই দিয়ে থাকে বাঙালি মুসলমানরা। এ কারণে এ রাষ্ট্রে ধমীয় প্রোপাগান্ডা ছড়ানো সহজ হয়েছে, ধর্মের নামে ব্যবসা করা সহয হয়েছে। বেশি কিছু না,শুধু মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে এ পর্যন্ত ইতিহাস দেখলেই সব আপনার চোখে পড়বে। আর এর মূল কারণ শুধু বৃটিশ রা নয়। এর উত্তর ভৌগলিক, সামাজিক, রাজনৈতিক প্রতিটি ক্ষেতেই এটি জড়িত। যে জাতি উন্নত বিজ্ঞান, দর্শন এবং সংস্কৃতির স্রষ্টা হতে পারে না, অথবা সেগুলোকে উপযুক্ত মূল্য দিয়ে গ্রহণ করতে পারে না, তাকে দিয়ে উন্নত রাষ্ট্র সৃষ্টিও সম্ভব নয়। যে নিজের বিষয় নিজে চিন্তা করতে জানে না, নিজের ভাল-মন্দ নিরুপণ করতে অক্ষম, অপরের পরামর্শ এবং শোনা কথায় যার সমস্ত কাজ-কারবার চলে, তাকে খোলা থেকে আগুনে, কিংবা আগুন থেকে খোলায়, এইভাবে পর্যায়ক্রমে লাফ দিতেই হয়। সুবিধার কথা হল নিজের পঙ্গুত্বের জন্য সব সময়েই দায়অ করবার মতো কাউকে না কাউকে পেয়ে যায়। কিন্তু নিজের আসল দুর্বলতার উৎসটির দিকে একবারও দৃষ্টিপাত করে না। বাঙালি মুসলমানদের মন যে এখনও আদিম অবস্থায়, তা বাঙালি হওয়ার জন্যও নয় এবং মুসলমান হওয়ার জন্যও নয়। সুদীর্ঘকালব্যাপী একটি ঐতিহাসিক পদ্ধতির দরুন তার মনের ওপর একটি গাঢ় মায়াজাল বিস্তৃত হয়ে রয়েছে, সজ্ঞানে তার বাইরে সে আসতে পারে না, তাই এক পা যদি এগিয়ে আসে, তিন পা পিছিয়ে যেতে হয়। মানসিক ভীতিই এই সমাজকে চালিয়ে থাকে। দু’বছরে কিংবা চার বছরে হয়ত এ অবস্থার অবসান ঘটানো যাবে না, কিন্তু বাঙালি মুসলমানের মনের ধরণ-ধারণ এবং প্রবণতাগুলো নির্মোহভাবে জানার চেষ্টা করলে এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার একটা পথ হয়ত পাওয়া যেতে পারে।