আমাদের 'শহর' এর প্রত্যেকের এটা পড়া উচিত। আমাদের শহরটা কিভাবে নষ্ট হয়ে গলে,পচে যাচ্ছে তার এক করুন রূপ তুলে ধরেছেন লেখক। হুমায়ুন আজাদ যতটা রুঢ়তার সাথে সত্য বলতে পারেন তার মত কেউ কখনই তা পারে না। অন্যরা যেখানে চাটুকারিতা করেছে সেখানে হুমায়ুন আজাদ লিখেছেন সব বাস্তব অপ্রিয় সত্য। বইটিতে একটি শহরের ধীরে ধীরে মরে যাওয়া, সমাজের অবক্ষয়, চারিদিকে দুর্নীতি ও রাহাজানির চিত্র তুলে ধরেছেন। লিখেছেন কিভাবে আমাদের নেতারা নিজেদের লাভের জন্যে শহরটাকে ছিবরে চুষে নিচ্ছে।
বইটি পড়তে গিয়ে
হেসেছি, আর মাঝে মাঝে ভেবেছি, পঁচে গলে নষ্ট হয়ে যাওয়া একটা শহরের কথা লিখেছেন লেখক। যে শহরের মানুষ বৃষ্টি কি জিনিস জানে না, মেঘের কথা বললে যারা হাঁসের ডিমের মতো বড় বড় চোখ করে তাকায়। মেঘ, বৃষ্টি আবার কি বস্তু? তাঁরা সেটা বুঝে না। যারা বুঝে তারাও ভুলে গেছে কিংবা ভুলে থাকতে চাইছে।
শিক্ষাব্যবস্থার করুণ দশা যেমনটা ছিল '৯৬' তে এবং আছে ২০২৪_এ। আমরা অতীতের মতোই আছি। এই চিন্তাটা স্বস্তির। কারণ আমরা জানি আমাদের বর্তমান কখনো অতীতের চেয়ে সুখকর হয় না। কালের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে আমরা পিছিয়ে পড়ি, পঁচে যাই, নষ্ট হয়ে যাই। আবর্জনায় ভরে উঠে আমাদের চারপাশ। রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে অফিস আদালত। বাচ্চাদের স্কুল, উঁচা স্কুল, মহা স্কুল, বিশ্ব স্কুল সবখানেই মহাপ্রভুদের জয়জয়কার। তাঁরা যা বলে তাই। আইন শব্দটি তাদের কাছে হাস্যকর। একইসাথে আমাদেরও।
মহাপ্রভুরা আইন মানে না, আইন সৃষ্টি করে। সাধারণরা সেই আইন মেনে চলে, ভাঙ্গে, কিন্তু গোপনে। মহাপ্রভুদের পদধূলি চেটে ধন্য হই আমরা। কিন্তু কথক চারপাশে এতো এতো ক্লেদ, হিংসা, দ্বেষ, ক্ষমতার কালো থাবা থাকা স্বত্বেও নৈরাশ্যবাদে ডুবে যান না। উঠে আসেন সাঁতরে, স্বপ্ন দেখেন একদিন শিশুরা নষ্ট হয়ে যাওয়া এই শহরটাকে পবিত্র করে তুলবে। মহাপ্রভুদের মহাপ্রাচির চূর্ণবিচূর্ণ করে দিবে। শহরের মানুষ আবার বৃষ্টি ভালোবাসবে, মেঘ দেখে অভিভূত হবে। ওই মেঘের ভিতর থেকে ঠিকরে পড়বে শাদা সবুজ নীল লাল আলো ।