ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের (১৮২০-১৮৯১) অন্যান্য শিশু-কিশোর রচনার মতো তিন খণ্ডে রচিত আখ্যানমঞ্জরী আমাদের এই সময়ের ছোট ছেলেমেয়েদের জন্য অবশ্যপাঠ্য বই। বিদ্যাসাগর বইয়ের ভূমিকায় বলেছেন, ‘যদি আখ্যানগুলো বালকদিগের ভাষাজ্ঞান ও আনুষঙ্গিক নীতিজ্ঞান বিষয়ে কিঞ্চিৎ অংশেও ফলোপদায়ক হয়, তাহা হইলে শ্রম সফল বোধ করিব।’
শুধু আনন্দ দান করা যেন আজকালকার শিশু-কিশোর পাঠ্যবইগুলোর প্রধান উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাহিত্য পাঠ করে আনন্দ লাভ করা অবশ্যই জরুরি। কিন্তু একই সঙ্গে শিশু-কিশোরদের নৈতিক চরিত্র গঠনও খুবই জরুরি। এটাও পড়তে পড়তেই হয়। শিশু-কিশোরদের তুলনা করা হয় নরম কাদামাটির সঙ্গে। কুমোর যেমন নরম কাদামাটি দিয়ে বাঁকিয়ে-ঘুরিয়ে বিচিত্র প্রয়োজনীয় তৈজসপত্র বানিয়ে তোলেন, তেমনি নৈতিক চরিত্র গঠনের উপযোগী গল্পকাহিনি পড়ে শিশু-কিশোররা সেইমতো তৈরি হয়। আখ্যানমঞ্জরীর মতো বইয়ের গুরুত্ব এখানেই।
আখ্যানমঞ্জরী বিদ্যাসাগরের কোনো মৌলিক গ্রন্থ নয়। এটি ইংরেজি বই অবলম্বনে রচিত। বইটি যেন একের ভেতরে দুই। প্রথম দুই ভাগ বা খণ্ড বয়সে কিছুটা ছোটদের জন্য। এখানে গল্পচ্ছলে সরস ভাষায় নৈতিক চরিত্র গঠনের জন্য নীতি উপদেশ দেওয়া হয়েছে। কয়েকটি আখ্যান বা কাহিনির শিরোনাম দেখলেই বোঝা যায়, ‘মাতৃভক্তি’, ‘পিতৃভক্তি’, ভ্রাতৃস্নেহ’, ‘লোভসংবরণ’, ‘গুরুভক্তি’, ‘ধর্মভীরুতা’, ‘নিঃস্বার্থ পরোপকার’ ইত্যাদি। সব মিলিয়ে আখ্যানমঞ্জরী একটি পরিকল্পিত কিশোরপাঠ্য।